জেলা পরিষদ হলের দর্শকরা মোহিত হলেন এক বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। মেদিনীপুরের অন্যতম প্রাচীন ও অগ্রগণ্য সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বরলিপির ৩৯তম বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো সোমবার। এদিন সন্ধ্যায় শহীদ প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি শ্যামলেন্দু মাইতি। স্বাগত ভাষণ দেন সংস্থার কর্ণধার সঙ্গীতাচার্য জয়ন্ত সাহা। পঞ্চাশ জনেরও বেশি শিল্পী সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় উদ্বোধনী সঙ্গীত।
প্রতিবারের মতো এবারেও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও চারুকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘স্বরলিপি সম্মান’ প্রদান করা হয় দুইজন কৃতি ব্যক্তিত্বকে ।এবারে স্বরলিপি সম্মান পান বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষক গোপাল নাগ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বর্ষীয়ান ফটোগ্রাফার নিমাই ঘোষ। সত্যজিৎ রায় সহ অন্যান্য বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বদের সহযোগী নিমাই ঘোষ এদিন অসুস্থতার কারণে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
এদিনের অনুষ্ঠানে গোপাল নাগ কর্তৃক, স্বরলিপির কৃতি ছাত্রী বাঁকুড়া নিবাসী দীপালি ঘোষের রবীন্দ্র সঙ্গীতের সিডি প্রকাশিত হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র গীতিআলেখ্য ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
এই গীতিআলেখ্য অর্পিতা চ্যাটার্জি, মধুমিতা মিশ্র, অনন্যা সাঁতরা, মন্টু পাত্র, দেবলীনা চ্যাটার্জী সাহা, অয়ন ঘোষদের একক সঙ্গীত ও স্বরলিপির শিল্পীদের সমবেত সঙ্গীত এবং পাশাপাশি শ্রাবণী দত্ত, ঈশিতা চট্টোপাধ্যায়, সোমা চট্টরাজ, নবনীতা বোসদের একক নৃত্য এবং জয়িতা হোড় ও ত্রিপর্ণা ভট্টাচার্য্যের পরিচালনায় যথা ক্রমে ‘ছন্দনীড়’ ও ‘রূপকম্ ড্যান্স একাডেমি’র শিক্ষার্থীদের সমবেত নৃত্যের মাধ্যমে হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে বিশেষ নিবেদন ‘মহারাজ এ কী সাজে” কবিতা, ভাষ্য , সঙ্গীত, নৃত্য, স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র।
এর মাধ্যমে প্রায় দেড়ঘন্টার এই উপস্থাপনে মোহিত হলেন জেলা পরিষদ হলে দর্শকরা। দীর্ঘ পাঁচ-ছয় মাসের পরিশ্রম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা তরুণ কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা ভাষ্য সুললিত কন্ঠে হৃদয়গ্রাহী ভাবে পাঠ করলেন মৌসিক্তা মুখোপাধ্যায়, অমিতেশ চৌধুরী, বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় ও নিভা ঘোষ।
অন্যদিকে সঙ্গীত শিল্পী জয়ন্ত সাহা, হায়দার আলি, শ্রাবণী মন্ডল, সুমন্ত সাহা, স্বাগত মাইতি, শুভ্রপ্রতীম চক্রবর্তী, সংঘমিত্রা দাস, ঊষসী করণের একক সঙ্গীত এবং স্বরলিপির শিল্পীদের সমবেত সঙ্গীতের সাথে সাথে শমীক সিংহ, মৈথিলী চ্যাটার্জী, তপস্বিনী ভট্টাচার্য, উজ্জয়িনী দাশগুপ্ত, সায়নী কোলে, শেষাদ্রী মিশ্রদের একক ও দ্বৈত নৃত্যের পাশাপাশি রাজীব খান, নবনীতা দাস, সবিতা সাহা, শাশ্বতী শাসমল, রাজনারায়ণ দত্তদের পরিচালনায় স্ব স্ব নৃত্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ‘তালম্’, ‘নৃত্যাঙ্গন’, ‘নটরাজ মিউজিক কলেজ’, ‘আঙ্গিকম্’, ‘সৃজনভূমি’র শিক্ষার্থীদের নৃত্য “মহারাজ এ কী সাজে” কে মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
যন্ত্রসঙ্গীতে কৌশিক প্রমানিক, মিহির মন্ডল, বাবলু মুখার্জি, তাপস দত্তদের যোগ্য সহযোগিতা পুরো অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলে। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুনন্দা বসু ও অক্ষয় লাল করকে। গোটা অনুষ্ঠানটি অনন্য সুন্দর ভাবে পরিকল্পনা করেন স্বরলিপির প্রাণভোমরা সঙ্গীত গুরু জয়ন্ত সাহা এবং গোটা অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন গুরু জয়ন্তবাবুর সুযোগ্য শিষ্য বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী হায়দার আলি।
ছবি সৌজন্যে – সৈকত সিং ও সুদীপ কুমার খাঁড়ার
Facebook Comments