হাবিবুর রহমান মল্লিক : সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গণ-উদ্যোগের আহ্বানে আজ বেলা ৩ টায় মহাজাতি সদন থেকে রাজভবন পর্যন্ত ধর্মের নামে অস্ত্রের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবীতে মিছিল এবং রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশন। বিগত এক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গ এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারে রামনবমী উদযাপনের নাম করে যেভাবে অস্ত্রমিছিল সংগঠিত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং হিংসা ছড়ানো হয়েছে তাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছেন তাঁরা। ন্যক্কারজনকভাবে শিশুদেরও এই অস্ত্র মিছিলগুলিতে সামিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুরুলিয়ার আরশা থানার অন্তর্বর্তী বেলদি গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগণার কাঁকিনাড়া, মুর্শিদাবাদের কান্দি, পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ-আসানসোল অঞ্চল-সহ অন্যান্য জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসায় ৫ জন নাগরিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে, একজন পুলিশের ডিসিপি সহ অনেকেই গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন। শতাধিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এই অশান্তির কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি। দাঙ্গায় জ্বালানো হয়েছে ঘরবাড়ি, মন্দির-মসজিদ, ভাঙা হয়েছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মূর্তি। সেই সব বিষয় নিয়ে তাঁদের আজকের আন্দোলন। পুরো রাজ্য জুড়েই এই হিংসার ফলে একটি বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, বিপন্ন বোধ করছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে অবিলম্বে এই হিংসা বন্ধ করতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং হিংসায় লিপ্ত সমস্ত দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন তাঁরা। যে সমস্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দাঙ্গার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি, তাদের পুনরায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে বলে আবেদনও করেছেন। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ নিরপরাধ মানুষদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও সরকারকে করতে হবে।
গণ উদ্যোগে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বহু দশক ধরেই শান্তিতে, সৌহার্দ-সম্প্রীতির পরিবেশে দুর্গাপুজো, ঈদ, খ্রিস্টমাস-সহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব পালন করে এসেছেন। অথচ গত বছর থেকে রামনবমীকে কেন্দ্র করে আরএসএস-বজরং দল-বিজেপি যেভাবে অস্ত্রমিছিল সংগঠিত করছে তাতেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং হিংসা ছড়াচ্ছে, যেটা আমাদের রাজ্যের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির পরিপন্থী। শাসকদল তৃনমূল কংগ্রেসও গত বছর থেকে হনুমানজয়ন্তী এবং এই বছর রামনবমী উদযাপনের প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে, তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা থাকায় রাজ্য প্রশাসনের ধর্মনিরপেক্ষ ভূমিকা ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিরা উৎসাহ পেয়েছে।
একদিকে বিজেপির দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা যেমন অস্ত্র হাতে মিছিল করেছে, অন্যদিকে অর্জুন সিং, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতন তৃনমূল কংগ্রেসের বিধায়কেরাও অস্ত্র মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছে। আসানসোলের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমাগত উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নেতা-মন্ত্রীদের এই ধরণের অস্ত্রমিছিল কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা আসলে ধর্মীয় উৎসব পালনের অছিলায় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করে নির্বাচনী ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের রুজি-রুটি-শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতন মৌলিক অধিকারগুলিকে সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া দুর্নীতিগ্রস্থ শাসকেরা সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে নিজেদের অপকর্মগুলিকে ঢাকার চেষ্টা করছে।
রাজ্যের শান্তি-সম্প্রীতির পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার্থে, আমরা রাজ্য প্রশাসনের কাছে এই ধরণের অস্ত্রমিছিল এবং সাম্প্রদায়িক কর্মসূচী সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার দাবী জানাচ্ছি।” যারা দাঙ্গা করছে শুধু তাদের ধরলেই হবে না, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়া নেতা-মন্ত্রীদেরকেও দলমত নির্বিশেষে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে বলে দাবী জানান তাঁরা।
ছবি সৌজন্য – দীপক বেপারী এবং হাবিব মল্লিক
Facebook Comments